দক্ষিণ কলকাতার সেরা ১০টি দুর্গাপূজা মণ্ডপ ২০২৫ সম্পর্কে জানুন। একডালিয়া এভারগ্রিন, নাকতলা উদয়ন সংঘ, সুরুচি সংঘ সহ দক্ষিণ কলকাতার জনপ্রিয় দুর্গাপূজার থিম, প্রতিমা ও বিশেষত্বের বিস্তারিত।
ভূমিকা
দক্ষিণ কলকাতার দুর্গাপুজো: ঐতিহ্য আর সৃজনশীলতার মিলন
দুর্গাপুজো মানেই কলকাতার রঙিন রূপ। প্রতিটি পাড়ায়, প্রতিটি মণ্ডপে নতুন সাজ, নতুন প্রতিমা আর ভক্তিমিশ্রিত আনন্দে মেতে ওঠে শহরবাসী। তবে দক্ষিণ কলকাতার দুর্গাপুজোকে আলাদা করে তোলে এর সৃজনশীলতা ও বিশাল আয়োজন। এখানে একদিকে যেমন ঐতিহ্যের ছাপ পাওয়া যায়, তেমনি দেখা যায় অভিনব থিম, চোখধাঁধানো আলোকসজ্জা আর শিল্পকলার অসাধারণ প্রকাশ।
উত্তর কলকাতার পুজো যেখানে ঐতিহ্যবাহী আবহে ভরপুর, দক্ষিণ কলকাতা সেখানে পরিচিত থিম–পুজোর রাজধানী হিসেবে। একডালিয়া এভারগ্রিন, দেশপ্রিয় পার্ক, ত্রিধারা সম্মিলনী বা সুরুচি সংঘ—প্রতিটি প্যান্ডেলই দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করে এক নতুন চমক, এক অনন্য শিল্পের দুনিয়া। তাই পুজোর দিনগুলোতে লক্ষ লক্ষ মানুষ ভিড় জমায় দক্ষিণ কলকাতার প্যান্ডেলগুলোতে, শুধু প্রতিমা দর্শনের জন্য নয়, শিল্প ও সৃজনশীলতার এই মহোৎসব উপভোগ করার জন্য।
২০২৫ সালেও দক্ষিণ কলকাতার দুর্গাপুজো দর্শকদের জন্য অপেক্ষা করছে নানা চমক নিয়ে। ঐতিহ্যের সাথে আধুনিকতার এই সুন্দর মিলনই প্রতিবার দক্ষিণ কলকাতার প্যান্ডেলগুলিকে করে তোলে অনন্য।
একডালিয়া এভারগ্রিন ক্লাব (বালিগঞ্জ) – মন্দিরের প্রতিরূপ ও বিশাল আয়োজন
দক্ষিণ কলকাতার দুর্গাপুজোর কথা উঠলেই প্রথম দিকের নামগুলির মধ্যে জায়গা করে নেয় একডালিয়া এভারগ্রিন ক্লাব। ১৯৪৩ সালে এই পুজোর সূচনা হয়েছিল, আর সেই সময় থেকেই এটি বাঙালির পুজো মানচিত্রে বিশেষভাবে পরিচিত। প্রতিবারই এখানে মণ্ডপ সাজানো হয় ভারতের বিখ্যাত কোনো মন্দিরের প্রতিরূপে। কখনও দক্ষিণ ভারতের মন্দির, কখনও আবার পুরীর জগন্নাথ মন্দির কিংবা অন্য কোনো ঐতিহাসিক স্থাপত্য—প্রতিটি বছরই দর্শনার্থীরা এক নতুন চমকের সাক্ষী হন।
এখানকার প্রতিমা সাধারণত ঐতিহ্যবাহী ধাঁচে তৈরি হয়। দেবী দুর্গা, মহিষাসুর এবং দেবদেবীদের ভঙ্গিমায় থাকে শাস্ত্রীয় আবহ, যা ভক্তদের মনে গভীর শ্রদ্ধা জাগায়। প্যান্ডেলের আভিজাত্য আর বিশাল আয়োজনে একডালিয়া এভারগ্রিন সর্বদা আলোচনায় থাকে। পুজোর সময়ে ভিড় সামলাতে বিশেষ ব্যবস্থাও নেওয়া হয়, কারণ দক্ষিণ কলকাতার সবচেয়ে বড় ভিড়ের পুজোগুলির মধ্যে এটিও অন্যতম।
২০২৫ সালেও এই পুজোর মূল আকর্ষণ হবে ঐতিহ্যবাহী প্রতিমার সাথে মন্দিরের প্রতিরূপ প্যান্ডেল। আশা করা হচ্ছে, এই বছর তারা আবারও দর্শকদের চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার মতো অভিনব স্থাপত্য তুলে ধরবে। তাই দক্ষিণ কলকাতার দুর্গাপুজো ঘুরতে গেলে একডালিয়া এভারগ্রিন ক্লাব অবশ্যই মিস করা চলবে না।
সিংহী পার্ক সর্বজনীন (গড়িয়াহাট) – ঐতিহ্য ও ধ্রুপদী প্রতিমা

দক্ষিণ কলকাতার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজো হল সিংহী পার্ক সর্বজনীন। ১৯৪১ সালে এই পুজোর সূচনা হয়েছিল এবং তারপর থেকে একটানা কয়েক দশক ধরে এটি গড়িয়াহাট এলাকার গর্ব হয়ে আছে। সিংহী পার্কের পুজোতে সবসময়ই ঐতিহ্যের ছাপ প্রবলভাবে লক্ষ্য করা যায়। এখানে প্রতিমা সাধারণত ধ্রুপদী শৈলীতে তৈরি হয়, যেখানে দেবী দুর্গাকে শাস্ত্রীয় ভঙ্গিমায় উপস্থাপন করা হয়। প্রতিমার সৌন্দর্য আর সরলতায় থাকে ভক্তির গভীর প্রকাশ, যা হাজারো দর্শনার্থীর মন ছুঁয়ে যায়।
প্যান্ডেল সজ্জায় এখানে অতিরিক্ত জাঁকজমক না থাকলেও, আলো–আঁধারের খেলা আর ভক্তিমূলক পরিবেশ দর্শনার্থীদের ভিন্ন অভিজ্ঞতা দেয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও এই পুজোর অন্যতম আকর্ষণ। রবীন্দ্রসংগীত, নৃত্য ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক পরিবেশনা প্রতিদিনের পুজোকে আরও সমৃদ্ধ করে তোলে।
২০২৫ সালের জন্যও সিংহী পার্ক সর্বজনীন তাদের ধ্রুপদী প্রতিমা আর ঐতিহ্যবাহী আবহ ধরে রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। দক্ষিণ কলকাতার অন্যান্য থিম–পুজোর ভিড়েও এই পুজো তার গাম্ভীর্য ও আভিজাত্যের জন্য স্বতন্ত্র। তাই গড়িয়াহাটে দুর্গাপুজোর দিনে আসলে সিংহী পার্কের প্রতিমা দর্শন একেবারেই মিস করা যায় না।
ত্রিধারা সম্মিলনী (বালিগঞ্জ) – ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মেলবন্ধন

দক্ষিণ কলকাতার সবচেয়ে জনপ্রিয় থিম–পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম হল ত্রিধারা সম্মিলনী। ১৯৪৭ সালে এই পুজোর সূচনা হয়েছিল, আর তখন থেকেই এটি ধীরে ধীরে শহরের দুর্গাপুজোর মানচিত্রে বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। নামের মতোই এখানে তিনটি রাস্তার সংযোগস্থলে এই পুজো অনুষ্ঠিত হয়, তাই ভিড়ের পরিমাণও থাকে চোখে পড়ার মতো।
ত্রিধারার বিশেষত্ব হল এর শিল্পনৈপুণ্য। প্রতিবারই তারা এমন এক থিম বেছে নেয় যা ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মধ্যে এক অনন্য সেতুবন্ধন গড়ে তোলে। প্রতিমা সাধারণত ঐতিহ্যবাহী ধাঁচে তৈরি হলেও প্যান্ডেলের সাজসজ্জা আর থিমের মাধ্যমে দর্শকদের কাছে পৌঁছে যায় নতুন বার্তা। এখানকার আলো, রঙ আর সৃজনশীল কারুকাজে প্রতিবারই শহরবাসী মুগ্ধ হন।
২০২৫ সালেও ত্রিধারা সম্মিলনী দর্শকদের জন্য আনবে নতুন চমক। থিম প্যান্ডেলের অভিনবত্ব, ধ্রুপদী প্রতিমার গাম্ভীর্য আর ভক্তিমূলক পরিবেশ—সব মিলিয়ে এই পুজো নিঃসন্দেহে দক্ষিণ কলকাতার সেরা দুর্গাপুজোগুলির মধ্যে অন্যতম। প্যান্ডেল–হপিংয়ের সময় যদি সত্যিই ঐতিহ্য আর সৃজনশীলতার মেলবন্ধন অনুভব করতে চান, তবে ত্রিধারা সম্মিলনী আপনার তালিকায় অবশ্যই থাকা উচিত।
দেশপ্রিয় পার্ক দুর্গাপুজো – রেকর্ড-ব্রেকিং বিশাল প্রতিমা

দক্ষিণ কলকাতার দুর্গাপুজো মানেই জাঁকজমক আর চোখধাঁধানো আয়োজন। আর সেই তালিকায় প্রথম সারির নাম হল দেশপ্রিয় পার্ক দুর্গাপুজো। এই পুজো মূলত রেকর্ড-ব্রেকিং বিশাল প্রতিমার জন্য বিখ্যাত। কয়েক বছর আগে এখানে প্রায় ৮০ ফুট উঁচু দুর্গা প্রতিমা স্থাপন করা হয়েছিল, যা গোটা দেশের নজর কেড়েছিল এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও শিরোনামে এসেছিল। সেই থেকেই দেশপ্রিয় পার্ক দুর্গাপুজো সারা শহরের মানুষের অন্যতম আকর্ষণ।
এখানকার প্যান্ডেল সবসময়ই হয় বিশাল আকারের এবং আলোকসজ্জায় ভরপুর। প্রতিবারই তারা এমন কিছু করে যা দর্শকদের মনে গভীর ছাপ ফেলে। বিশাল প্রতিমার সামনে দাঁড়ালে মনে হয় দেবী যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছেন। দুর্গোৎসবের সময় এই মণ্ডপে ভিড় এতটাই হয় যে অনেক সময় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
২০২৫ সালের দেশপ্রিয় পার্ক পুজোতেও থাকবে নতুন চমক। যদিও আয়োজকরা থিম গোপন রাখেন, তবু প্রত্যাশা করা হচ্ছে যে তারা আবারও নজরকাড়া আয়োজনের মাধ্যমে দর্শকদের অবাক করে দেবে। তাই দক্ষিণ কলকাতার Top 10 Durga Puja Pandal–এর মধ্যে দেশপ্রিয় পার্ক দুর্গাপুজো সর্বদাই এক অনন্য অবস্থান ধরে রাখে।
বাদামতলা আশার সংঘ (কালীঘাট) – পুরস্কার জয়ী থিম পুজো

দক্ষিণ কলকাতার দুর্গাপুজোর মানচিত্রে এক বিশেষ নাম হলো বাদামতলা আশার সংঘ । ১৯৩০-এর দশকে শুরু হওয়া এই পুজো আজ শহরের অন্যতম জনপ্রিয় থিম–পুজো হিসেবে খ্যাত। ছোট্ট এলাকা হলেও এখানে প্রতি বছর এমন অভিনব থিম নির্বাচন করা হয়, যা দর্শকদের মুগ্ধ করে দেয়।
এই মণ্ডপের বিশেষত্ব হলো শিল্পীদের সৃজনশীলতা। কাঠ, বাঁশ, মাটি, কাপড় কিংবা ধাতব টুকরো—যে কোনো উপাদান দিয়ে তারা গড়ে তোলে এক অনন্য শিল্পকর্ম। আর প্রতিমার সাজসজ্জা ও আলোকসজ্জার সাথেই থিমের মিলন ঘটায় এই পুজোকে আলাদা মর্যাদা দেয়। তাই এখানে আসল আকর্ষণ শুধু দেবী দর্শন নয়, বরং থিমের মাধ্যমে এক নতুন ভাবনার জগতে প্রবেশ।
বাদামতলা আশার সংঘ বহুবার “শ্রেষ্ঠ থিম পুজো” পুরস্কার জিতেছে। ২০২৫ সালেও তারা আনতে চলেছে এমন এক অভিনবত্ব, যা প্যান্ডেল হপিং–প্রেমীদের তালিকায় এই পুজোকে রাখবে সবার ওপরে। কালিঘাটে আসলে তাই একবার অবশ্যই ঘুরে দেখতে হবে এই অনন্য শিল্পসৃষ্টি।
নাকতলা উদয়ন সংঘ – শিল্পে সামাজিক বার্তার ছোঁয়া
দক্ষিণ কলকাতার দুর্গাপুজোর জগতে নাকতলা উদয়ন সংঘ এক বিশেষ নাম। শুধু প্যান্ডেল আর প্রতিমার বিশাল আয়োজনই নয়, এই পুজো প্রতি বছর দর্শকদের মনে নাড়া দেয় তার সামাজিক বার্তাবাহী থিম–এর জন্য। সমাজের নানা সমস্যাকে শিল্পের ভাষায় তুলে ধরাই যেন এদের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
একদিকে চমকপ্রদ প্রতিমা ও ঝলমলে আলোকসজ্জা, অন্যদিকে জীবন্ত সামাজিক বার্তা—এই দুইয়ের অনন্য সমন্বয়ই নাকতলা উদয়ন সংঘকে আলাদা মর্যাদা দিয়েছে। এখানে প্রতিবারই এমন কিছু দেখানো হয় যা শুধু চোখকে আনন্দ দেয় না, মনের গভীরেও চিন্তার খোরাক জোগায়।
অতীতে এরা নারীর ক্ষমতায়ন, পরিবেশ রক্ষা, সাম্যের বার্তা, কিংবা দুর্বলদের প্রতি সহমর্মিতা—এসব থিমকে কেন্দ্র করে প্যান্ডেল সাজিয়েছে। তাই শুধু বিনোদন নয়, এক ধরনের শিক্ষামূলক অনুভূতিও দর্শকরা সঙ্গে নিয়ে ফেরেন।
নাকতলা উদয়ন সংঘ দুর্গা পূজা 2025 থিম
প্রস্তাবনা
দুর্গাপুজো মানেই নতুন থিমের অপেক্ষা, নতুন ভাবনার প্রকাশ। কলকাতার অন্যতম সেরা ও জনপ্রিয় পুজোগুলির মধ্যে একটি হলো Naktala Udayan Sangha। প্রতি বছরই অভিনব থিম আর জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে দর্শকদের মন জয় করে নেয় তারা। ২০২৫ সালেও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। এবারের থিমের নাম “Arpan” — অর্থাৎ “অর্পণ”।
এবারের থিম: “অর্পণ” (Arpan)
২০২৫ সালের থিম ঘোষণা করেছে Naktala Udayan Sangha – “Arpan”।
- অর্থ: ‘অর্পণ’ মানে হলো উৎসর্গ বা নিবেদন।
- ভাবনা: দেবী দুর্গার কাছে ভক্তির নিবেদন, আত্ম-উৎসর্গ এবং পূজার মাধ্যমে মানুষের আবেগকে একত্রিত করা।
- উদ্দেশ্য: সমাজকে বোঝানো যে সত্যিকারের আনন্দ তখনই আসে যখন আমরা কিছু উৎসর্গ করি – দেবীর কাছে, প্রকৃতির কাছে, কিংবা সমাজের প্রতি।
সন্তোষপুর লেক পল্লী – স্থানীয় শিল্প আর অভিনব সৃজনশীলতা
দক্ষিণ কলকাতার দুর্গাপুজোর এক ঝলমলে নাম হলো সন্তোষপুর লেক পল্লী। প্রতিবছর এই পুজোয় দেখা যায় অভিনবত্ব আর সৃজনশীলতার অসাধারণ প্রকাশ। এখানে থিম নির্বাচন থেকে শুরু করে প্রতিমা নির্মাণ, প্যান্ডেল সজ্জা থেকে আলোকসজ্জা—সব কিছুতেই থাকে একেবারে নতুনত্বের ছোঁয়া।
সন্তোষপুর লেক পল্লীর মূল বৈশিষ্ট্য হলো স্থানীয় শিল্পীদের অংশগ্রহণ। এলাকার শিল্পী ও কুমোররা মিলে গড়ে তোলেন একেকটি অনন্য শিল্পকর্ম, যা শুধু দেবী দর্শনের আয়োজন নয়, বরং শিল্পমাধ্যমের মাধ্যমে এক আলাদা বার্তা বহন করে। কাঠ, বাঁশ, কাগজ, ধাতু কিংবা বর্জ্য সামগ্রী—সব ধরনের উপকরণ দিয়েই তৈরি হয় চমকপ্রদ প্যান্ডেল।
এখানকার প্রতিমাগুলিও ভিন্ন রূপে হাজির হয় প্রায় প্রতি বছর। কখনও ক্লাসিক ধ্রুপদী রূপ, কখনও আবার থিম–ভিত্তিক অভিনব শৈলী—দর্শকদের সবসময়ই এক নতুন অভিজ্ঞতার স্বাদ দেয় এই পুজো। রাতের বেলায় আলো আর রঙের খেলা মিলিয়ে প্যান্ডেলটি যেন স্বপ্নপুরী হয়ে ওঠে।
২০২৫ সালের Top 10 Durga Puja Pandal in South Kolkata তালিকায় সন্তোষপুর লেক পল্লী নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। এখানে এসে শুধু শিল্পকলা উপভোগ নয়, বরং স্থানীয় প্রতিভার উজ্জ্বল প্রকাশের সাক্ষী হওয়া যায়।
মুদিয়ালি ক্লাব (কালিঘাট) – ইকো–ফ্রেন্ডলি ভাবনায় অভিনব প্যান্ডেল
দক্ষিণ কলকাতার দুর্গাপুজো মানেই ঝলমলে আলোকসজ্জা, বিশাল প্যান্ডেল আর অভিনব প্রতিমা। এর মাঝেও মুদিয়ালি ক্লাব (কালিঘাট) বরাবরই আলাদা জায়গা করে নিয়েছে তাদের ইকো–ফ্রেন্ডলি ভাবনা আর পরিবেশ সচেতন বার্তার জন্য।
প্রতিবছর এরা প্যান্ডেল নির্মাণে এমন সব উপকরণ ব্যবহার করে যা পরিবেশবান্ধব—যেমন বাঁশ, মাটির উপাদান, কাপড়, কিংবা পুনর্ব্যবহারযোগ্য সামগ্রী। শুধু প্যান্ডেল নয়, প্রতিমার সাজসজ্জাতেও থাকে প্রকৃতির কাছাকাছি এক অনুভূতি। এর ফলে পুজোর জাঁকজমক বজায় থেকেও প্রকৃতি রক্ষার এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পৌঁছে যায় দর্শকদের কাছে।
মুদিয়ালি ক্লাবের অন্যতম বিশেষত্ব হলো প্রতিটি থিমে সামাজিক দায়িত্ববোধের প্রতিফলন। যেমন জল সংরক্ষণ, বৃক্ষরোপণ, দূষণ প্রতিরোধ—এসব বিষয়ে মানুষকে সচেতন করাই যেন এদের মূল উদ্দেশ্য। রাতের বেলা আলোকসজ্জা ও নান্দনিক সজ্জা মিলিয়ে প্যান্ডেলটি হয়ে ওঠে এক চমকপ্রদ শিল্পকর্ম, তবে প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই।
২০২৫ সালের Top 10 Durga Puja Pandal in South Kolkata–এর তালিকায় মুদিয়ালি ক্লাব নিঃসন্দেহে একটি বিশেষ নাম। কারণ এই পুজো শুধু দর্শনীয় নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তাও বহন করে।
যোধপুর পার্ক সর্বজনীন – ভিড় আর নান্দনিক প্রতিমা
দক্ষিণ কলকাতার দুর্গাপুজোর মানচিত্রে যোধপুর পার্ক সর্বজনীন এক বিশেষ আকর্ষণ। প্রতিবছরই এখানে দর্শনার্থীর ঢল নামে, কারণ এই পুজোর মূল আকর্ষণ হলো এর নান্দনিক প্রতিমা আর অভিনব শিল্পসম্মত প্যান্ডেল।
যোধপুর পার্ক সর্বজনীন মূলত পরিচিত তার সৃজনশীল প্রতিমা নির্মাণের জন্য। প্রতিবারই এখানে দেবী দুর্গার প্রতিমা নতুন আঙ্গিকে সাজানো হয়, কখনও ধ্রুপদী রূপে, আবার কখনও থিম–ভিত্তিক আধুনিক শিল্পের ছোঁয়ায়। প্রতিমার ভঙ্গি, রঙের ব্যবহার, ও সূক্ষ্ম খুঁটিনাটিতে এমন নিখুঁত সৌন্দর্য থাকে যে দর্শকরা ঘন্টার পর ঘন্টা থেকে যান শুধু সেই শিল্পকর্ম উপভোগ করার জন্য।
তবে শুধু প্রতিমাই নয়, প্যান্ডেলের নান্দনিক সজ্জা আর আলোকসজ্জাও সমানভাবে মন কাড়ে। বাঁশ, কাঠ, কাপড়, কিংবা বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে গড়ে ওঠে একেকটি অনন্য স্থাপত্য, যা যেন শিল্প ও সৃজনশীলতার মেলবন্ধন।
ভিড় এখানে এতটাই বেশি হয় যে, দক্ষিণ কলকাতার অন্যতম জনপ্রিয় Top 10 Durga Puja Pandal in South Kolkata তালিকায় এর নাম বরাবরই থাকে। রাতের বেলায় আলোর খেলা আর প্রতিমার গাম্ভীর্য মিলিয়ে যোধপুর পার্ক সর্বজনীন সত্যিই এক অনন্য অভিজ্ঞতা দেয়।
সুরুচি সংঘ (নিউ আলিপুর) – ভারতের রাজ্যভিত্তিক সাংস্কৃতিক প্রদর্শনী
দক্ষিণ কলকাতার দুর্গাপুজোর ভিড়ে যে পুজোটি সবসময়ই দর্শনার্থীদের জন্য এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে, সেটি হলো সুরুচি সংঘ (নিউ আলিপুর)। এরা বরাবরই পরিচিত তাদের ভারতের রাজ্যভিত্তিক সাংস্কৃতিক প্রদর্শনী–র জন্য।
প্রতিবছর সুরুচি সংঘের প্যান্ডেলে আলাদা আলাদা রাজ্যের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে অভিনব থিম তৈরি করা হয়। কখনও রাজস্থানের রাজপ্রাসাদ, কখনও কাশ্মীরের উপত্যকা, কখনও আবার দক্ষিণ ভারতের মন্দিরকলা—এইভাবে ভারতের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি একত্রে তুলে ধরা হয় প্যান্ডেলের মাধ্যমে। দর্শকরা যেন কলকাতাতেই দাঁড়িয়ে ভারত ভ্রমণ করে ফেলেন।
এখানকার প্রতিমার শৈলীও বিশেষ মনোযোগ কাড়ে। প্রতিবারই প্রতিমাকে এমনভাবে সাজানো হয় যাতে নির্বাচিত রাজ্যের শিল্প–ঐতিহ্যের ছাপ প্রতিফলিত হয়। পাশাপাশি, প্যান্ডেলের সাজসজ্জায় ব্যবহৃত হয় স্থানীয় হস্তশিল্প, রঙিন কাপড়, কাঠ, ধাতু কিংবা রাজ্যভিত্তিক শিল্পকলা—যা পুরো পরিবেশকে করে তোলে শিক্ষামূলক ও দৃষ্টিনন্দন।
Top 10 Durga Puja Pandal in South Kolkata তালিকায় সুরুচি সংঘের নাম তাই সবসময়ই থাকে। কারণ এই পুজো শুধু বিনোদন দেয় না, বরং ভারতের বৈচিত্র্যকে একসূত্রে বেঁধে মানুষকে মনে করিয়ে দেয়—“বৈচিত্র্যের মধ্যেই ঐক্য।”
দক্ষিণ কলকাতার সবচেয়ে জনপ্রিয় দুর্গাপূজা কোনগুলো?
সাধারণত Kalighat বা Gariahat অঞ্চল থেকে শুরু করলে কাছাকাছি বেশ কয়েকটি বিখ্যাত প্যান্ডেল একসাথে দেখা যায়।
দক্ষিণ কলকাতার প্যান্ডেল হপিং শুরু করার সেরা জায়গা কোনটা?
সাধারণত Kalighat বা Gariahat অঞ্চল থেকে শুরু করলে কাছাকাছি বেশ কয়েকটি বিখ্যাত প্যান্ডেল একসাথে দেখা যায়।
দক্ষিণ কলকাতার কোন পূজাগুলো থিমের জন্য বিখ্যাত?
Suruchi Sangha, Badamtala Ashar Sangha, Hindustan Park, Tridhara Sammilani – এরা প্রতি বছর ভিন্ন ভিন্ন সামাজিক ও আর্ট থিমের জন্য জনপ্রিয়।
সবচেয়ে বড় ভিড় কোন প্যান্ডেলে হয়?
Deshapriya Park, Ekdalia Evergreen, Jodhpur Park-এ প্রতিদিন কয়েক লক্ষ মানুষ ভিড় করে।
পরিবার ও শিশুদের জন্য কোন প্যান্ডেলগুলো বেস্ট?
Ballygunge Cultural, Singhi Park, Suruchi Sangha পরিবার নিয়ে ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত কারণ এখানে আলো ও নিরাপত্তা ভালো থাকে।
দক্ষিণ কলকাতায় প্যান্ডেল হপিং করতে কত সময় লাগে?
যদি Top 10 pandal দেখতে চাও, তাহলে একদিনে 6-7 ঘণ্টা লাগবে। তবে আরাম করে সব দেখতে চাইলে দুদিনে ভাগ করলে ভালো।
মেট্রো বা ট্রামে কোন কোন রুট সুবিধাজনক?
Kalighat, Deshapriya Park, Jatin Das Park Metro → কাছাকাছি একাধিক পূজা।
Rabindra Sarobar Metro → Jodhpur Park, 95 Pally, Tridhara Sammilani।
Kalighat থেকে Gariahat পর্যন্ত হাঁটলে Ekdalia, Hindustan Park, Singhi Park একসাথে দেখা যায়।
বিদেশি পর্যটকরা কোন পূজাগুলোতে বেশি যান?
বিদেশি পর্যটকরা সাধারণত যান – Suruchi Sangha (thematic), Ekdalia Evergreen (traditional), Deshapriya Park (grand idol)।
South Kolkata Durga Puja pandal hopping-এর সময় কী কী জিনিস খেয়াল রাখা উচিত?
আরামদায়ক জুতো পরুন 👟
প্রচুর হাঁটতে হবে, তাই হালকা ও কমফর্টেবল জুতো সবসময় বেস্ট।
Metro & Public Transport ব্যবহার করুন 🚇
দক্ষিণ কলকাতায় ট্রাফিক প্রচণ্ড হয়, তাই Kalighat, Rabindra Sarobar, Jatin Das Park, Gariahat এর মেট্রো রুট কাজে লাগান।
সকাল বা দুপুরে বেরোলে ভিড় কম হয় 🌞
সন্ধ্যার পর ভিড় খুব বাড়ে। ভিড় এড়াতে দুপুরে বা ভোরে বের হওয়া ভালো।
পানীয় জল ও হালকা খাবার সঙ্গে রাখুন 🥤
দীর্ঘ সময় বাইরে থাকতে হবে, তাই জল ও ছোট snacks রাখা জরুরি।
মোবাইল চার্জ ও পাওয়ার ব্যাংক নিন 🔋
ছবি তোলা ও নেভিগেশনের জন্য মোবাইল চার্জ থাকা দরকার।
ছোট ব্যাগ নিন, বেশি জিনিস বহন করবেন না 🎒
ভিড়ে বড় ব্যাগ বা ভারী লাগেজ এড়ান।
লোকাল ফুড ট্রাই করুন 🍴
দক্ষিণ কলকাতার প্যান্ডেল হপিং মানেই রাস্তার ধারের কাটি রোল, ফুচকা, মটন চপ – এগুলো মিস করবেন না।
প্যান্ডেলের নিরাপত্তা নির্দেশনা মেনে চলুন 🚧
পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকদের নির্দেশনা অনুসরণ করলে যাতায়াত সহজ হবে।
গ্রুপে ভ্রমণ করলে মিটিং পয়েন্ট ঠিক করুন 👥
ভিড়ে আলাদা হয়ে গেলে আগে থেকে ঠিক করা জায়গায় সবাই মিলে আবার জড়ো হতে পারবেন।
ভিড়ের সময়ে ধৈর্য ধরুন 🙏
দুর্গাপূজা উৎসবের মূল আনন্দই হলো ভিড় ও উৎসবের আবহ – তাই ধৈর্য ধরে উপভোগ করুন।